মুহাম্মদ ওমর হামজা:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি স্বীয় বান্দাকে মূখলিস হওয়ার পথ বাতলিয়ে দিয়েছেন এবং বান্দার আমলকে পরিশুদ্ধ করার পাথেয় হিসেবে তিনি ইখলাসকে গুরুত্বপূ্র্ণ বিষয় সাব্যস্থ করেছেন। দরুদ ও সালাম মহানবী (সা)এর উপর যিনি স্বীয় উম্মাহকে সকল আমল ইখলাসের সাথে সম্পন্ন করার শিক্ষা দিয়েছেন।
আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয় তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) তাঁর বান্দা ও রাসূল।
অতঃপর, আমি আজকের জুমুআর আলোচনায় ইসলামের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় ‘ইখলাস’ নিয়ে ইনশা আল্লাহ আলোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছি।
সম্মানিত উপস্থিতি, মুমিন-মুসলিম জীবনধারায় ইখলাস হলো খুবই জীবনঘনিষ্ট একটি আরবি শব্দ। বাংলায় এর অর্থ -আন্তরিকতা,অকপটতা,ঐকান্তিকতা,নিষ্ঠা আর ইংরেজিতে Sincerity,Earnestness. মূলতঃ ইখলাস হলো ভাল কাজে ভন্ডামী বর্জন করা।আধ্যাত্নিকসাধকগণ বলেন,নির্মলতার জন্য দূষিত পন্কিলের ভেজাল থেকে মনকে নিষ্কৃতিদান।তাঁরা এও বলেন যে,নিজের আমলের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাক্ষ্য তলব না করাই হলো ইখলাস।তাই বলা হয় নোংরামি হতে আমলসমুহের পরিচ্ছম্নতা হলো ইখলাস। আসলে ইখলাস বান্দা ও আল্লাহ তাআ’লার মধ্যে এমন একটি আবরণ যার কারনে ফেরেশতা ও জানতে পারেনা কিছু লেখার,শয়তান জানেনা তা নষ্ট করার,প্রবৃত্তি জানতে পারেনা তার দিকে ঝোকার।
বস্তুতঃ ইখলাস হলো অন্তরের সুবাস,জীবনের সন্জীবনী এবং সকল সাফল্যের কেন্দ্রবিশেষ। আল-কুরআনের ১১২নংসূরার নাম হলো সূরা আল ইখলাস। কেননা, এই সূরায় খালেছ তওহীদ, একনিষ্ঠ ও নির্ভেজাল তওহীদের কথা বলা হয়েছ। ইখলাস সম্পর্কে সূরা আল বাইয়্যানাতে আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে, ইহাই সঠিক দীন।”
এছাড়াও আল কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে যা ইখলাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক নিদর্শণা রয়েছে। তা’ছাড়া হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদীস পাওয়া যায় যাতে তিনি ইখলাস সম্পর্কে বলেছেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআ’লা উম্মাতে মুহাম্মাদীকে ইখলাস দ্বারা তার সম্মান ও পুরুষত্বকে হেফাজত করবেন।
মানুষের মন পরিবর্তনকারী ও পাপ মার্জনাকারী মহান আল্লাহর নিকট বান্দার আমলসমূহ কবুল হবার শক্তিশালী মাধ্যম হলো ইখলাস। এই প্রসংগে সাহাবী আবু উমামা(রা:) এর বর্ণিত আবু দাউদ ও নাসাঈ শরীফে উল্লেখিত হাদীসটিতে যথাযথভাবে ইখলাসের গুরুত্ব জানা যায়, ” তিনি বলেন,এক ব্যক্তি নবী করীম (সা.) এর কাছে এসে বললো, যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে সাওয়াব ও দূনিয়ার খ্যাতির উদ্দেশ্যে, তাহলে সে কি পাবে? তিনি বললেন,কিছুই না।সে ব্যক্তি একথাটি তিনবার পূনরুক্তি করলো এবং নবী করীম (সা.)ও বললেন কিছুই না। এতঃপর তিনি বললেন আল্লাহ তাআ’লা শুধু সেই আমলই কবুল করবেন, যা একান্তভাবে তারই জন্য করা হয় এবং তার সন্তুষ্টি লাভই তার উদ্দেশ্য হয়। আল্লাহ তাআ’লা স্রেফ সেই আমলই প্রতিদানের যোগ্য মনে করেন যাতে কোন ভেজাল থাকেনা।”
তাছাড়া সাহাবী মাআ’য বিন জাবাল (রা:)কে ইয়ামন প্রেরণ প্রাক্কালে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)কে আবেদন করেন, ইয়া রাসূলল্লাহ!আমাকে উপদেশ দান করুন। অতঃপর নবী করীম (সা.) বলেন, তোমার দ্বীনকে খাঁটি কর। সামান্য আমলই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।
দ্বীনি ও আমলী বিষয়াদিতে আল্লাহর জন্য মনকে একনিষ্ঠ করার বা মূখলিস হওয়ার উপকারিতা অনেক। তম্মধ্যে : (ক) ইখলাস হলো বান্দার কথা ও আমল কবুল হওয়ার ভিত্তি।(খ) দু’আ কবুলের ভিত্তি। (গ) আল্লাহর পৃষ্টপোষকতা ও সহায়তা লাভের মাধ্যম (ঘ) ইখলাস দুনিয়া ও আখিরাতে মানুষের ইজ্জতকে উন্নত করে। (ঙ) ইখলাস আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত-বন্দেগী থেকে মুক্তি দেয়। (চ) ইখলাস দ্বারা মুমিনের ঈমান মজবুত হয়।(ছ) মুমিমের অন্তরে প্রশান্তি অর্জিত হয়।(জ) ইখলাস মুমিনকে কুমণ্ত্রনা ও অলিক কল্পনা থেকে দুরে রাখে।
আল্লাহ মুমিন- মূখলিস বান্দাদের সম্পর্কে সূরা নিসার ১৪৬নং আয়াতে বলেন, “কিন্তু তারা তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে,আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলন্বন করে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাদের দ্বীন একনিষ্ঠ থাকে,তারা মুমিনদের সঙ্গে থাকবে এবং মুমিনগণকে আল্লাহ অবশ্যই মহাপুরস্কার দিবেন।”

মুহাম্মদ ওমর হামজা 
সাবেক অধ্যক্ষ
খুটাখালী তমিজিয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা।